মো. আয়নাল হক রাজশাহী, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ (বাসস): রাজশাহীসহ বৃহত্তর বরেন্দ্র এলাকায় গত কয়েক বছর ধরে অসময়ের আম ‘কাটিমন’ চাষ স্থানীয় অর্থনীতিতে নতুন গতি এনে দিয়েছে। থাই জাতের এই আম চাষ করে অনেক কৃষকই তাদের ভাগ্য বদলাতে শুরু করেছেন।
দীর্ঘদিন ধরে প্রচলিত দেশি জাতের আমের তুলনায় কাটিমন তুলনামূলকভাবে নতুন ও ভিন্ন প্রজাতির। এর ব্যাপক বাণিজ্যিক সম্ভাবনা এখনো পরীক্ষাধীন থাকলেও কৃষকদের কাছে এটি উচ্চমূল্য, সারা বছর ফলন এবং নতুন সম্ভাবনার কারণে আকর্ষণীয় হয়ে উঠছে।
সারা বছর ফলন: স্থানীয় অর্থনীতিতে নতুন গতি
রাজশাহীতে কাটিমন আমের চাষ নতুন হলেও এর বিস্তার দ্রুত ঘটছে। থাই জাতের এই আম বছরে তিন থেকে চারবার ফলন দিতে পারে। ফলে কৃষকদের জন্য এটি সারা বছর আয়ের সুযোগ তৈরি করছে।
প্রচলিত জাতের আম বছরে একবার, সাধারণত মে থেকে আগস্টের মাঝামাঝি পর্যন্ত বাজারে আসে। কিন্তু কাটিমন গাছে ফুল ও ফল একসঙ্গে ধরায় এটি বছরে একাধিকবার ফলন দেয়। এর ফলে কৃষকরা তিন-চার মাসের সীমাবদ্ধ মৌসুমের বাইরেও নিয়মিত আয়ের সুযোগ পাচ্ছেন।
কাটিমন চারা উৎপাদন ও বিক্রির চাহিদা বাড়ায় স্থানীয় নার্সারিগুলোর জন্যও নতুন সুযোগ তৈরি হয়েছে, যা সামগ্রিকভাবে স্থানীয় অর্থনীতিকে আরও চাঙা করছে।
চাষিদের সাফল্যের গল্প ও বর্ধিত চাহিদা
চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার বাবুনগর গ্রামের আমচাষি আলামিন হোসেন গত চার-পাঁচ বছর ধরে কাটিমন আম চাষ করে ইতোমধ্যেই দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।
রাজশাহীর তানোর উপজেলার মুণ্ডুমালা এলাকা এবং গোদাগাড়ী উপজেলার কাঁকনহাটে তাঁর দুটি বাগান রয়েছে, যেখানে ছয় হাজারেরও বেশি কাটিমন গাছ আছে। আলামিন জানান, তিনি এবার প্রায় ১ হাজার ৩০০ মণ আম উৎপাদন করতে পারবেন বলে আশা করছেন। বর্তমানে এই আম প্রতি কেজি ১৫০ থেকে ১৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
অন্যদিকে, রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার কৃষক রফিকুল ইসলাম প্রচলিত ধারা ভেঙে শুধু অফ-সিজনে আম তোলেন, যখন বাজারে কোনো প্রতিযোগিতা থাকে না। তিনি বলেন,
“আমি শুধু অফ-সিজনে আম তুলি। তখন বাজারে প্রতিযোগী না থাকায় দামে তিনগুণ বেশি লাভ পাই।”
প্রথম দিকের এই সাফল্য এবং সারা বছর আম উৎপাদনের সম্ভাবনা স্থানীয় কৃষকদের কাছে কাটিমনকে ক্রমশ জনপ্রিয় করে তুলছে। অনেক কৃষকই এখন সক্রিয়ভাবে এ জাতের আম রোপণ করছেন। পুঠিয়া উপজেলার কনাইপাড়া গ্রামের শাকাওয়াত হোসেন মুন্সি বলেন, পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে ভালো জাতগুলো দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে।
চ্যালেঞ্জ ও গবেষণার দিক
চাহিদা বাড়ার পাশাপাশি কাটিমন আমের আরও একটি সুবিধা হলো—এটি অন্যান্য জাতের চেয়ে বেশিদিন সংরক্ষণ করা যায়। তবে কৃষি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সারা বছর পরিচর্যা খরচ কৃষকদের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ।
রাজশাহীর আঞ্চলিক ফল গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. শফিকুল ইসলাম জানান, বিদেশি জাতের এই আমটির রোগবালাই প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং এই অঞ্চলের উপযোগিতা নিয়ে বর্তমানে গবেষণা চলছে।